বিয়ে নিয়ে বিড়ম্বনা- বাকি অংশ


অনেক মানুষ মনে করে জন্ম,মৃত্যু, বিয়ে একটা পূর্বনির্ধারিত ব্যাপার। জন্ম মৃত্যুর কথা না হয় বাদ দেওয়া যাক। কিন্তু বিয়ে যদি নির্ধারিত থাকতো তাহলে তো কোনো সমস্যা থাকতো না, এত বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। আসলে বিয়েটা একটা প্রাকৃতিক প্রয়োজন। তাই এই প্রয়োজন পূরণের জন্য উদ্যোগী হতে হয়। উদ্যোগের উপরই নির্ভর করে সাফল্য।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক- একজন মেয়ে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ।বাবা শিল্পপতি, মা শিক্ষিকা। লন্ডন থেকে মেয়েটি উচ্চশিক্ষার পর একটি বিদেশি ফার্মের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে। জীবনে সে কোন খারাপ কর্ম করে নাই। অন্যরা সবাই বলে সে যথেষ্ট শালীন ও মার্জিত ভদ্র এবং সুশ্রী। তবুও বয়স ২৯ পার হয়ে গেল এখনো তার বিয়ে হচ্ছেনা। এটাকে সে ভাগ্যের লিখন বলে মনে করে, আসলে এটা কি ঠিক?

একজন পুরুষ  যখন আর একজন মহিলাকে বিয়ে করে তার ভরণপোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তার উপর বর্তায়। মেয়েটি যেহেতু উচ্চশিক্ষার পর বিদেশি সংস্থায় বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে, সেহেতু যে এই বিষয়টি  জেনে  তাকে বিয়ে করবে তাকে তো সাহসী হতে হবে। ‌যেহেতু মেয়েটি অনেক উচ্চ বেতনে চাকরি করেন সেহেতু  সে নিজেই নিজের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে পারবেন।তাই তাকে অন্যজনের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা তার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

বিয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ মনে করে যে তার ভাগ্যে থাকলে হবে। অধিকাংশ মেয়েরা সুশ্রী ছেলে খুঁজে, কিন্তু তিনি নিজে কি রকম সেটা কখনো ভেবে দেখে না।সবাই বেশিরভাগ সিনেমার নায়ক/নায়িকা খোজে কিন্তু বিয়েটা তো কোন সিনেমা না।

আবার যখন বিয়ের প্রস্তাব আসে তখন অনেকেই বলে এখন না পরে করব। আপনি বিয়ে করার জন্য দেরি করবেন।মাস্টার্স শেষ  করে তারপর বিষয়টা নিয়ে ভাববেন।খুবই ভাল কথা।আপনার একটা ভালো অবস্থান হলো, একটা চাকরি হলো তখন কিন্তু আপনার চেয়ে উঁচু ছাড়া নিচের বা সমপর্যায়ের কাউকে তো আপনার বিয়ে করতে মন চাইবে না।

বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ পুরুষই চায় সে যেন তার থেকে কম বয়সের এবং কম যোগ্যতাসম্পন্ন মেয়েকে বিয়ে করতে। অতএব,প্রতিটা মেয়েকে সেটা বুঝতে হবে। যখন বিয়ের প্রস্তাব আসে তখন রাজি না হওয়াটা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।অনেকে তো ভাবতে ভাবতে সময় পার করে দেয়। তারপর বয়স যখন ৩০ পার হয় তখন পছন্দমতো বিয়ে করতে পারা কঠিন হয়ে যায়। কারণ বেশিরভাগ ৪০ বছরের ছেলেরাও চিন্তা করে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সের মেয়েকে বিয়ে করবে।এজন্য সময় মতো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জরুরি।

এবার একটু প্রেমের বিয়ের বিড়ম্বনায় যাওয়া যাক। একটা মেয়েকে আট বছর ধরে একটা ছেলে ভালোবাসে।ছেলের মা-বাবা তাকে পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করছে না কারণ মেয়েটির গায়ের রং কালো। যদিও মেয়ে সুশিক্ষিত তারপরও সে ছেলের মা-বাবার মনঃপুত হচ্ছে না।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে ছেলেটির কি করা উচিত? সে মেয়েটিকে ছাড়তেও পারছেনা এবং বাবা মায়ের অবাধ্যও হতে পারছেনা। এখন তার কি করা উচিত?

আমাদের সমাজে এই ধরণের সমস্যা অনেকেই ফেস করে থাকেন।একমাত্র ছেলে হওয়ার জন্য  সেই ছেলেই তো বংশের সবকিছু। মা বাবা তো ছেলের বিরুদ্ধে যেতেও সাহস করবে না। যা সে বলবে তাই  মা-বাবা করবেন। শুধু একটু কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। যদি এটাই হয় যে শুধু কালো হওয়ার কারণেই পছন্দ করছেন না তাহলে তো দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা আছে।আর কালো জগতের আলো। ব্ল্যাক ডায়মন্ড হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি জিনিস।

আসলে মা-বাবাকে বোঝানোটা তেমন একটা কঠিন কিছু নয়। এক ছেলে হয়ে যদি সে না জানে যে কিভাবে মা-বাবার কাছ থেকে ভালবাসা আদায় করতে হয়।তার প্রথমে উচিত,মা বাবার পা ধরে বসে থাকা। আট বছর পরে যদি বলে যে মা-বাবা রাজি হয় না এটা ঠিক নয়। তার অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল। আর বিয়ে সবসময় মা বাবার সম্মতি নিয়ে করা উচিত এবং মা-বাবাকে সম্মত করানো খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে আজকালকার ছেলেমেয়েদের সুবিধা তো অনেক। আগে এত সুবিধা ছিল না।

কারণ আগে অনেক ছেলে মেয়ে ছিল। একটা মারা গেলেও তো আরো পাঁচ সাতটা থাকত। এখনকার মা-বাবাদের এভাবে বলার কোনো উপায় নেই তবে মা-বাবাকে বিষয়টা অবগত করতে হয়। 

আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরনো প্রেম বিয়ের পাকাপাকির সময়ে ঝামেলা করে।সংগত কারণে বিয়ের কথা পাকাপাকি অবস্থায় অনেকের আবার পুরনো প্রেমিকের কথা মনে পড়ে। ছেলেটিকে ভূলতে মেয়টির প্রচণ্ড কষ্ট হয় তখন। পাঁচ-ছয় বছরের সম্পর্ক থাকার পরও সেটা যখন ছেলের অপরিপক্কতার কারণে কিংবা তার ক্যরিয়ার এর কারণে মেয়েকে ছেড়ে দিতে হয়। তারপর সেই মেয়ের পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ের জন্য চাপ দেয় কিন্তু অন্য কাউকে সেই মেয়ে মেনে নিতে পারেনা তখনই শুরু হয় বিয়ের আর এক বিড়ম্বনা।

SCAN TO VIEW

OUR OFFICES